ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে তিন দিনে তিন জাহাজডুবিতে অন্তত ৭০০ শরণার্থীর মৃত্যুর আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের বরাত দিয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র শনিবার জানান, নিহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে।
লিবিয়া থেকে ইতালি পৌঁছানোর আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার পথে বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একটি করে তিনটি জাহাজ ডুবে যায়। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ফেদেরিকো ফসি বলেন, ‘পরিস্থিতি খুবই নাজুক। আমরা এ মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা বলতে পারছি না। আমরা তাদের পরিচয়ও জানতে পারব না। তবে এই সপ্তাহে তিন জাহাজডুবিতে ৭০০ বা এর বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা করছি।’
ইতালির সিসিলিতে দাতব্য সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের মুখপাত্র জিওভান্না ডি বেনেদেত্তো বলেন, ‘তিনটি ঘটনায় মোট কতজন মারা গেছে তার সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব। তবে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যারা রক্ষা পেয়েছে তারা জানিয়েছে আগের দিন দুটি মাছ ধরা জাহাজ এবং একটি ডিঙি নৌকায় অন্তত এক হাজার ১০০ শরণার্থী লিবিয়া থেকে রওনা হয়েছিল। প্রথম জাহাজে পাঁচ শর মতো যাত্রী ছিল। এ জাহাজটির সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল দ্বিতীয় জাহাজটি। এটিতেও পাঁচ শর মতো যাত্রী ছিল। হঠাৎ করে দ্বিতীয় জাহাজটি ডুবে যেতে থাকলেও সেখানকার কিছু যাত্রী সাঁতরে প্রথম জাহাজে আসার চেষ্টা করছিল। অন্যরা দুই জাহাজের মধ্যকার দড়ি ধরে ছিল। এ সময় প্রথম জাহাজের সুদানিজ ক্যাপ্টেন জাহাজের দড়ি কেটে দেন এবং জাহাজটি ডুবে যায়।’
উদ্ধার পাওয়া এক যাত্রী বলেন, ‘জাহাজে যখন পানি ঢোকা শুরু করে তখন আমরা পানি বন্ধ করতে সব রকম চেষ্টা করেছি। কেউ হাত দিয়ে, কেউ গ্লাস দিয়ে পানি বের করেছি। আমরা প্রায় দুই ঘণ্টা এমন করেছি কিন্তু আমাদের কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। আস্তে আস্তে পানি বাড়তে থাকে এবং যারা নিচে ছিল তাদের আর কোনো সুযোগ ছিল না। পুরুষ, মহিলা, শিশু সবাই ডুবে যায়। যাদের মধ্যে মাত্র কয়েক দিন বয়সেরও শিশু ছিল।’
ইরিত্রিয়া থেকে আসা ১৩ বছর বয়সী কিদানে বলেন, ‘আমি আমার মা এবং ১১ বছর বয়সের বোনকে ডুবে যেতে দেখেছি। চারদিকেই শুধু মৃতদেহ।’
আবহাওয়া ভালো থাকায় এ সময়ে লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ইতালি আসার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। ইতালিয়ান নিউজ এজেন্সি আনসা জানিয়েছে, গত এক সপ্তায় অন্তত ৭০টি ডিঙ্গি এবং ১০টি নৌকায় শরণার্থীরা এসেছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলিনো আলফানো বলেন, অবৈধপথে শরণার্থীদের আগমন ঠেকাতে লিবিয়া এবং আফ্রিকা দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত একটা চুক্তিতে পৌঁছানো দরকার। সূত্র : এএফপি।
পাঠকের মতামত